জাহান্নাম এমন একটি শব্দ যা শ্রবণে মুমিনের হৃদয় প্রকম্পিত হয়ে ওঠে, ভয়াবহ আজাবের দৃশ্য মানব হৃদয়ে ভেসে ওঠে। জাহান্নাম বা জাহান্নামিদের ভয়ানক অবস্থা শুধু লেখে বা বয়ান করে বুঝানো যাবে না। তাই বেশি বেশি জাহান্নাম ও কবরের আজাব থেকে মুক্তির দোয়া করা চাই। চাইলেই তো আল্লাহপাক দান করবেন। যেমন— হাদিসে এসেছে, হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মহান রব্বুল আলামিন রমজানের প্রতিদিন বহু জাহান্নামিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। এবং রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, প্রতিদিন প্রত্যেক মুসলমানের একটি দোয়া অবশ্যই কবুল হয়ে থাকে। (বায্যার) আলোচ্য হাদিসের প্রতি লক্ষ্য করলে কয়েকটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়ে যায়। এক. রমজানে আল্লাহপাক প্রতিদিন ব্যাপক হারে জাহান্নামিদের জাহান্নাম থেকে মুক্তির ফয়সালা করেন। রব্বুল আলামিনের জাহান্নাম থেকে মুক্তির ফয়সালা মানেই তাকে জান্নাত দান করবেন। দুই. রহমতে আলম সাল্লাল্লাহ আলাইহে ওয়াসাল্লাম হাদিসের শেষাংশে ইরশাদ করেছেন, প্রতিদিন প্রতিটি মুসলমানের একটি করে দোয়া আল্লাহতায়ালা কবুল করে থাকেন। খাঁটি মনে তওবা ও দোয়া করলে কোনোটাই তিনি ফেরত দেন না। কারও দোয়ার ফল দুনিয়াতে, আবার কাউকে পরকালে দিয়ে থাকেন। বান্দার জন্য সব সময় তিনি কল্যাণ ও মঙ্গলের ফায়সালা করে থাকেন। তাই আমাদের প্রকৃত মুসলিম ও আল্লাহতায়ালার প্রিয় বান্দা হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। একে অপরের জন্য দোয়া করতে হবে। দোয়া করতে হবে দোয়া কবুল হওয়ার মুহূর্তে। যেমন— রমজানে ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে, সেহেরির সময় এবং ফরজ নামাজের পর দোয়া কবুল হয়ে থাকে। এ ছাড়াও হাদিসে বর্ণিত অনেক সময় আছে যে সময় দোয়া কবুল হয়ে থাকে। দোয়া করতে হবে নিজের জন্য, পিতা-মাতা বেঁচে থাকলে তাদের কল্যাণের জন্য, আর বেঁচে না থাকলে কবরের আজাব মুক্তি ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য, নিজের মহল্লার জন্য এবং দেশবাসীর জন্য এবং দেশের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য। বিশেষ করে ইফতারের পূর্ব মুহূর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়ে ইফতারের আইটেম কতটা হলো আরও হলে ভালো হতো এই চিন্তা না করে অন্তত পাঁচ মিনিট পূর্বে স্ব স্ব অবস্থান থেকে সবাইকে নিয়ে দোয়া করি। রমজানের যে কয় দিন বাকি আছে যদি একটি করে দোয়া কবুল হয় তাহলে হাদিসের ভাষ্য মতে অন্তত আট-নয়টি বিশেষ দোয়া আল্লাহ কবুল করবেন। একজন বান্দার জন্য যদি মৌলিক আটটি দোয়া কবুল হয়ে যায় তার জীবনের বিশাল সফলতা অর্জিত যাবে ইনশাআল্লাহ। তাই আসুন সবাই মিলে দোয়া করি ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাইজুবিকা মিনান নার’। হে আল্লাহ আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাই। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবার নেক দোয়া কবুল করুন। আমিন।
লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব বারিধারা।